গভীর রাত পারি দিলাম চুপ করে মনের গুপ্ত অপরাধবোধ চাপা দিয়ে। ভোর হল,পাখির কলকাকলিতে পূর্ণ পৃথিবী। আমি চোরের মত চুপ করে প্রবেশ করলাম কবরস্থানে। ছোট্ট একটি অদৃশ্য কবর। ভেতরে গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে একটি শিশু।বয়স মাত্র ২ মাস ৯ দিন। আসলে ওর ভ্রুণটার বয়সই ঐটা। জিজ্ঞেস করলাম -বাবা,কিছু খাবে?
-“তুমি আমাকে রেখে চলে যাও কেন বারবার?”
আমি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার তো কিছু বলার ভাষা নেই। যে কয়টা ভাষায় কথা বলতে পারি সবগুলো আজ আমাকে ছেড়ে পালাচ্ছে। আমি আর কোনদিনই কথা বলতে পারব না। কবরের ফলকটা আবারও এক পলক দেখে নিলাম-
জন্ম-২০/১০/২০০০,মৃত্যু-২৮/১২/২০০০।
-বাবা
-হু
-আমার নাম রাখবে না কখনো ?
-কী জানি
-কেন?
-নাম রেখে কী হবে!
-আচ্ছা আমি ছেলে না মেয়ে?
-তুমি শিশু,তুমি দেবতা,তুমি দেবশিশু।
-বাবা
-হু
-আমাকে মেরে ফেললে কেন?
- আমাকে মাফ করে দাও
-মা কই?
-মা বাসায়
-কী করে?
-ঘুমাচ্ছে হয়তো
- তুমি ঘুমাওনি?
-হ্যা ঘুমিয়েছি
-আমাকে দেখতে এসেছ?
-হু
-চলে যাবে একটুপরে?
-হু
-আমার না ভয় লাগে
-আমি আবার আসব
-কখন?
-কালকে
-আমি যে ভয় পাব
-তোমার কিছুই হবে না
-কালকে আমাকে বাসায় নিবে বাবা?
-তুমি যাবে?
-হ্যা,মাকে দেখব
-মাকে নিয়ে আসব কালকে
-আমাকে বাসায় নিবে না?
-তোমার জন্য খেলনা নিয়ে আসব
-আমাকে নিতে তোমার এতই অসুবিধা?
আমি আর থাকতে পারলাম না । ছুটে বেরিয়ে গেলাম কবরস্থান থেকে। চায়ের দোকান থেকে চা খেলাম। জীবনের শেষ চা। খেয়ে বাসায় যাব। আমার টেবিলের ড্রয়ারে ঘুমের ঔষধ আছে এক পাতা। এরপর আমার মৃত্যু অবধারিত। আমি জানি আমার মৃত্যু হলে আমি চলে যেতে পারব আমার সন্তানের কাছে। ওর সাথেই থাকব। ওর আর ভয় লাগবে না । আমি থাকতে ওর ভয় নেই ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন