সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পেশা-২

ট্যারা মজনুকে ক্রসফায়ারে মারারর পর প্রেস কনফারেন্স করলাম একটা। প্রেস কনফারেন্সে ট্যারা মজনুর প্রতি সাংবাদিকদের সহানুভূতি দেখে রাগে মাথা গরম হয়ে গেছে। বাসায় ফিরে আমার স্ত্রীকে বললাম জলদি মাথায় পানি ঢালো। শালার মজনু নাকি নিরাপরাধ। আরে এর নামে থানায় কেস আছে থানায় চার-পাঁচটা । আরো কত শত ইনভিসিবল কেস তার স্টেশন আছে নাকি! আমার সাথে বিটলামি! ঢালো মাথায় পানি ঢালো। রাতে ঘুমানোর আগে তিন পেগ ‘লাল পানি’ খায়া তবেই ঘুমালাম। পরদিন সকালে ডাইরেক্ট আইজি স্যারের ফোন-“তুমি তো কাজটা ঠিক করলে না শফিক। ট্যারা মজনুকে মারতে গিয়ে মেরে ফেলেছ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে।” শুনে তো আমার গলা শুকিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার সংস্থা আর সাংবাদিকগুলা স্যারকেও উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে দিল। স্যারকে এখন ক্যামনে বুঝাই যে ঐ পোলা আসলেই মজনু ছিল। বুঝলাম এখন বেশী কথা বললেই বিপদ। দেখি একটা স্ট্র্যাটেজ নিয়া। বললাম- আসলে স্যার ব্যাপারটা হয়েছে কী আমি স্যার মিস ইনফর্মড হয়েছি। আমার সারা শরীর দিয়ে দরদরিয়ে ঘাম পড়ছে। এইরকম নার্ভাস শুধু ছিলাম জীবনের প্রথম ক্রসফায়ারে। আমার বস কাজটার পর বললেন এখন একটু ড্রিঙ্ক কর শফিক সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই থেকে আমার টুকটাক ড্রিঙ্ক করার অভ্যাস। ওপাশ থেকে অপেক্ষা করছি আইজি স্যার কী বলেন তার জন্য। স্যার কয়েক সেকেন্ড সময় নিলেন, তারপর বললেন-“তুমি এভাবে কাজ করলে তো তোমাকে ট্রান্সফার করতে হবে। তোমাকে ক্লোজ করার জন্য চাপ আসছে নানা জায়গা থেকে। আমার ছোটভাইয়ের বন্ধু না হলে তোমাকে আমি সত্যিই ট্রান্সফার করে দিতাম। ব্যাপারটা একটু সিরিয়াসলি দেখো, রাখলাম।” আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক ভালো,স্যার ট্রান্সফার করবেন না,ক্লোজ করলে করুক। ঐটারে সামাল দেয়া যাবে পরে। সহজভাবে এই থানায় আসি নাই আমি,আমারে ট্রান্সফার করা এতোই সহজ! পুরা ক্যাশ বিশ লাখ টাকা দিয়া তবেই ঢাকার বাইরে থেকে এই থানায় জয়েন করছি। আইজি স্যারের ছোটভাই আমার ক্লোজ ফ্রেণ্ড তাতেই না একটু কমায় রাখলেন উঁনারা। আমি বুঝলাম না একটা সন্ত্রাসীকে মেরে ফেলার জন্য মানুষ এত হাউকাউ করে ক্যান। তুই ব্যাটা ক্যামনে বুঝস ঐ পোলা মজনু না লায়লা। ভাল মানুষের ছল ধইরা কত পাবলিক আকাম-কুকাম করে। কাজটা কিভাবে সামাল দেয়া যায় ভাবতে ভাবতেই এক সাংবাদিকের ফোন-“শুনলাম আপনাকে নাকি সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে? আপনি কি আপনার অপরাধ স্বীকার করছেন? আপনার প্রতিক্রিয়া?” রাগে মোবাইল বন্ধই করে দিলাম। বাইনচোতটার সাহস কতো বড়, আমার সাথে ত্যাদড়ামি! অফিসে গিয়েই অর্ডার দিলাম- নো সাংবাদিক,কাউরে এলাউ করবা না। আমার মিরপুর এলাকায় ইনফর্মার আছে পাঁচটা। সবগুলাই বিটলা। ফোন লাগাইলাম মানিকরে, ‘ডাইলের’ বিজনেস করে সে। আমি তার কাছ থেকে কোন বখরা নেই না। রেগুলার খালি ইনফর্মেশন জানতে চাই। কোন সপ্তাহে ইনফর্মেশন না দিলে শাস্তি,বখরার রেট ডাবল কইরা উশুল। ফোন দিয়া তারে আসতে বললাম। আসলে দিলাম টাইট দিয়া- “ঐ ব্যাটা তুই ট্যারা মজনুর কাছ থিক্যা আরো তিরিশ লাখ আইন্যা দিবি, ভাবছিলাম তো কেউ জানব না। ব্যাটা কবি না যে ঐ পোলা ইনভার্সিটিতে পড়ে। কইছিলাম তরে ছোট-খাট এলাকার মাস্তান একটারে মাইরা ফালাই,তোর উপর ভরসা কইরা করছি ভুল। শোন, কেস হইলে সাক্ষী দিবি ওই পোলা তোর কাছ থিকা ডাইল খাইত,রেগুলার কাস্টমার আছিল।তোর কাছে চান্দাও চাইছে। নিজেরে পরিচয় দিছে ট্যারা মজনু কয়া। তুই তো চিনস আমারে, এখন পর্যন্ত ক্রসফায়ার করছি সাতাইশটা। মানিক আমার থ্রেট খায়া ভাগল। এইবার ফোন লাগাইলাম মানিকের এলাকার রিপনরে। বললাম মানিকের উপর নজর রাখতে,উনিশ-বিশ হইলে যেন আমাকে জানায়। চা এক কাপ খায়া এইবার ফোন দিলাম লিঙ্কন ওরফে মৃত ট্যারা মজনুর বাসায়। আসল মজনু তো থাকে ইন্ডিয়ায়। বেনামে একটা থ্রেট দিয়া রাইখা দিলাম। মনে একটু শান্তি পাইলাম। এইবার দেখি আমারে কে ট্রান্সফার করে আর কে ক্লোজ করে। তবে তার আগে ‘মিষ্টি’ নিয়া যাব মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে।

[উপরের গল্পটির সাথে কেউ নিজের মিল পেলে তা নেহাতই কাকতাল মাত্র। উপরের সকল চরিত্র কাল্পনিক এবং কল্পনাপ্রসূত]


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দক্ষিণ মৈশুন্দি কিংবা ভূতের গলিতে মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে (3)

কোথায় পাব তারে  মোহাম্মদ শহীদুল হক সাব ৯-৫টা চাকরি করেন। ৫টার একমিনিটও বেশি সময় তিনি অফিসে দিতে চান না,যদিনা কেউ তার বিপরীত পাশের চেয়ারে বসে না থাকে। উঁনার বিভাগের উঁনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় কাজের গতি ও সময় নির্ধারণ উঁনার হাতেই বর্তায়। আমরা বলতে পারি এই ৯-৫টার মধ্যকার এক ঘন্টা সময়ও উঁনি নষ্ট করেন না, বাইরের অনাকাঙ্খিত কেউ আসলে প্রবেশমুখে পিওন আঁটকে দেয়, বলে দেয় স্যার অফিসে নেই। এটা মোহাম্মদ শহীদুল হক সাব ইচ্ছা করেই করেন; না বলে আমরা বলতে পারি এটা তার অভিজ্ঞতা ও পেশা গত দক্ষতা যে উঁনি উটকো লোক এড়িয়ে চলতে পারেন, আর যেহেতু সরকারি চাকরি তাই এখানে ভোক্তা সন্তুষ্টি বা আম জনতার সাথে সম্পর্ক রাখারও কিছু নেই, প্রাইভেট কোম্পানিতে যেভাবে ক্লায়েন্ট সার্ভিস বা অন্যান্য যোগাযোগ মেনে চলার একটা দায় বর্তায়, সরকারি চাকরিতে এসব থাকে না। প্রতি সোম  আর বুধবার মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে বিভাগীয় প্রধান, সচিবসহ অন্যান্যরা মিটিং করেন রুটিন অনুযায়ী।  মোহাম্মদ শহীদুল হক সাব সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে তাঁর পিতৃ নিবাসে চলে যান, এখানে উঁনি আর কাজের লোক শাহ আলম ছাড়া কেউ থাকে না, শাহ আলম উঁনার ব্যক্তিগত গাড়ি চালকও বট

ট্রলার

পান চিবাইতে চিবাইতে আব্দুর রহমান বাড়ি ফিরে। দুপুরে খাবারের পর সে নিয়ম করে ঘর থেকে বাইর হয়, তা যতই বৃষ্টি হোক কিংবা ঠাডা পড়া রোদই হোক না কেন, রশিদের দোকান থেকে সে পান কিনে, হালকা জর্দা দেয়া, একটু চুন সাথে সুপারি দেয়া অর্ধেক পান খাবে সে এবং শেষ পিকটা ফেলবে সে তার বাড়ির দরজার পাশের দেয়ালে আর এভাবেই ঐ দেয়ালটার নিচের সম্পূর্ণ অংশ সবসময় লাল হয়ে থাকে। আব্দুর রহমান চল্লিশোর্ধ্ব, কোন কারনে সে এলাকায় গরুর ব্যাপারী হিসেবে পরিচিত, তাকে সবাই আব্দুর রহমান বেপারী ডাকে, তবে লোকে তাকে কেন গরুর ব্যাপারী ভাবে সে আজো ঠাওর করতে পারেনা, কোনদিন ঘোর লাগা এক বর্ষার রাতে সে কলিমুদ্দি ব্যাপারীর সাথে তাস খেলতে খেলতে হয়তো গরুর বেপার নিয়ে দুই একটা কথা বলছিল তাতেই কি লোক তাকে ব্যাপারী নাম দিল নাকি তা নিয়ে সে প্রায়ই ভাবে এবং ভাবতে ভাবতে কোন কুল কিনারা না করতে পেরে মাছের ট্রলার আজো কেন ফিরল না সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়। আব্দুর রহমানের আসল কাজ মিয়া বাড়ির আটটা ট্রলার দেখা শোনা করা, এবং এই এলাকায় যে আর কারো দুই একটার বেশি ট্রলার সে বাড়তে দেয়না এইটা জানার কারণে মিয়া বাড়ির বড় মিয়া তাকে বেশ স্নেহ করে আর এই স্নেহ মাঝে মধ্যে বাড়

দক্ষিণ মৈশুন্ডি কিংবা ভূতের গলিতে আমরা কয়েকজন একা একা মানবেরা (5)

৫। ভাদাইম্যা মিজান শেফালিকে দূর থেকে দেখে মকবুলের মা , কাছে আসতেই বলে -‘ উদলা হয়া গেছিলা কই ? মাইয়্যা মানুস ঘোমটা ছাড়া ঘর থন বাইর হয় নিকি ?’ শেফালি বিব্রত হয় , ভুলে যায় শাশুড়ির কথা । মকবুলের মা বলে উঠে -‘ তোমার চলন বলন আরো ঠিক কর বউ , আমার পোলা সামনের বছর হজ্বে যাইব নিয়ত করছে , হাজ্বি সাবের বিবি তুমি , ঠিক কইছি না !’ শেফালি ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেয় । আসলেই শেফালি তো এখন সাহেরা আপার বান্ধা কাজের মেয়ে না , এই বাড়ির বউ । মকবুল এই এলাকার নামিদামি মানুষদের একজন । সে প্রথম প্রথম বুঝতে পারে নাই , এখন যখন আসে পাশে যায় , প্রতিবেশিদের সাথে মিশে তখন জানতে পারে সবাই , বিশেষ করে কসাইভিটা , লালবাগ , জিঞ্জিরা এলাকার লোক মকবুলকে কত মান্য করে । কসাইভিটার প্রত্যেক ঘরে ঘরে মকবুলের কৃতজ্ঞতার জন্য দোয়া করা হয় , ঘরে ঘরে মকবুলের দেয়া কিছু না কিছু থাকে । শেফালি শুনে আর অবাক হয় , নিজেকে ভাগ্যবান ভাবে । আমি ভাদাইম্যা মিজান , সারাদিন টো টো কইরা ঘুরি দেইখা আমার এই নাম । পুরা দক্ষিণ মৈশুন্ডি আর ভূতের গলিতে আমারে সবাই চিনে এই নামে । আমার এই নামের পেছনে যদিও কোন তাৎপর্য নাই কিন্তু তারপরও লোকে ব্যাখ্য