সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দক্ষিণ মৈশুন্দি কিংবা ভূতের গলিতে মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে (4)


৪। মকবুল





কসাইভিটা জামে মসজিদ থেকে জুম্মার নামাজ পড়ে মকবুল বাড়ির দিকে রওনা দেয়, পথিমধ্যে একটা ভ্যানগাড়ি থেকে ‘শরিফা’ কিনে নেয় নতুন বউয়ের জন্য। মকবুল শেপালির ব্যবহারে মুগ্ধ, যেমন রান্না তেমন তার কন্ঠ। মকবুল ভাত খাইতে খাইতে শেপালিরে বলে একটা গান শুনাতে, শেপালি গান শুনায়- তুমি বন্ধু আর এলেনা বিচ্ছেদের পরে, আমি ছিলাম পা ডুবায়ে মাঝ দরিয়াতে, তুমি ছিলা ভিনদেশি তাই খুইজা পাইলাম না, আমি কান্দি দিবা নিশি , কান্দন থামেনা। মকবুল ভাইবা পায় না এই গান সে কোথায় শুনছে নাকি কোনদিনই শুনে নায়,আজই প্রথম। -বউ তুই ভাল গান গাছ, কই হিকছস? শেপালি লজ্জা পায়, শেপালি ভাবে এই গান তার শাশুড়ি পাশের ঘর থিকা শুনলে তারে কিনা কি বলবে ! সে যেহেতু নতুন বউ তাই তাকে আরও কিছুদিন লজ্জা শরম মাইনা চলতে হবে এবং মাথা থিকা ঘোমটা ফালানো যাবেনা, এমনটাই হুকুম শাশুড়ির। মকবুলের মা কড়া মহিলা, মকবুলের বাপ মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানকে উনি মানুষ বানাইছেন, মেয়ে এখন বিয়া কইরা স্বামী সোহাগি, ছেলেরে মাত্র বিয়া করাইছেন, বউ মাশাল্লাহ সুন্দরি, গরিব ঘরের, তাতে আরো ভাল হইছে। কথা শুনে, গোলামের স্বভাব একদিকে ভাল, তারা আদব ল্যাহাজ মাইনা চলে।



ভাত খায়া মকবুল জিরায়, শেপালির বুকের গন্ধ নেয়, নতুন শারী-ব্লাউজের ভেতর থিকা শেপালির ঘামের গন্ধ –স্নো-পাউডারের গন্ধ একাকার হয়। মকবুল শেপালিরে দরজা লাগায়া বসতে বলে, শেপালি আপত্তি করেনা। ভাদাইম্যা মিজান যখন তার হাত ধরত জানালার ফাক দিয়া তখন সে পায়ে আর ঘাড়ে যে শিরশির অনুভূতি পাইত,এখন মকবুল তার বুকে মুখ দিলে তার থিকাও বেশি শিরশির অনুভূতি পায়। শেপালি এই দিনে দুপুরে দরজা লাগাইতে লজ্জা পায়না, কারন তার শাশুরি বলছে- ভাব ভালবাসা করবা স্বামী স্ত্রী সব সময়, কিন্তু একদম শব্দ করবা না , মনে রাখবা পাশের ঘরে আমি আছি। তাই শেপালি শব্দ যতটা কম করা যায় তার থেকেও কম শব্দ করে ঘরের দরজা লাগায়। মকবুলের পাশে বসে, মকবুল কখনো তার হাতে কখনো বুকে কখনো শাড়ি সরিয়ে পেটে মুখ গুজে। মকবুল কানে কানে বলে – আমার ফ্যাক্টরির নতুন বদনার নাম দিছি শেপালি। শেফালি আরো কুকড়ায়, সে বলে উঠে- আমারে দেহাইলেন নাতো একবারও। - আরে মাগী এহনো বানাই নাইক্যা, বানামু , বানায়া একটা তরে দিমু। শেপালি চোখ বন্ধ করে, সে কখনো ভাবে নাই এই লোক তাকে এতো সোহাগ করবে, কিন্তু যেদিনই দক্ষিণ মৈশুন্দির কারো সাথে মকবুলের দেখা হবে সেদিন কি হবে তা ভেবে শেফালির ঘাম ছুটে, মকবুল তাতে আরো উত্তেজিত হয়। শেফালি মকবুলের পিঠ খামচিয়ে ধরে রাখে।



মকবুল মাঝ রাতে ধরমরিয়ে উঠে, শেফালির পাতলা ঘুম, সে মকবুলকে পানি খাওয়ায়। শেফালি আবার ঘুমায় পড়ে। মকবুল নিয়মিত এই স্বপ্ন দেখে, আজ ত্রিশ বছরের উপরে, সে শেফালিকে দেখে, শেফালির ব্লাউজ আলনায় ঝুলছে, পেটিকোট মাটিতে পড়ে আছে। মকবুল শেফালির বুকে হাত রাখে, শেফালি মকবুলকে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়না, গত কয়েকরাত ধরেই দেখছে, এই লোক রাতে ঘুমায় না, বসে থাকে। আবার ভোরের দিকে ঘুমায়। মকবুল বিড়ি ধরায়, জানালা খুলে দেয়। এই স্বপ্ন মকবুলকে ঘুমাতে দেয়না। দুইটা পরিচিত কন্ঠস্বর, জড়াজড়ি করে, ছায়া ওঠানামা করে, ধরফর করে দুইজোড়া বুক, মিলেমিশে একাকার হয় সব লজ্জা, পাত্তা পায়না পাশে দাঁড়ানো মকবুল, কেউ ওকে ধমকায় পাশের ঘরে ঠেলে দেয়। আবার ফোঁসফোঁস শব্দ, গোঙানি, তৃপ্তি, সঙ্গমের তৃপ্তি। মকবুল দৃঢ় বোধ করে, শেফালির পাছায় হাত বুলায়,  শেফালি মকবুলের দৃঢ়, শক্ত হয়ে থাকা লিঙ্গে হাত দেয়, হাত বুলাতে বুলাতে নিজের দুই পায়ের মাঝখানে নিয়ে আসে। মকবুল বলে উঠে-তোর পেট বান্ধামু, তোর  দশটা পোলা হইব। শেফালি মকবুলের পিঠ আঁচড়ায়। -আপ্নে কী স্বপ্ন দেখেন?
- আমি দেখি দুইটা ছায়া, পরিচিত ছায়া।
-কার ছায়া?
-একটা আমার মায়ের, আরেকটা...
-আরেকটা কার?
মকবুল অস্পষ্ট স্বরে বলে-আরেকটা যার তারে আমি অনেকদিন ধইরা খুঁজতাছি, পাইলে গলায় গামছা প্যাচায়া মারমু, শেফালি শুনতে পায়না, খালি বলে- আপনে পাগল। মকবুল শেফালির ভেজা ভেজা যোনীতে হাত বুলায়, শেফালি গোঙায় না শাশুরির ভয়ে। কিন্তু ওর খুব গোঙাতে ইচ্ছা হয়।
-আপ্নে আমারে জংগলের মাঝখানে একটা বাড়ি বানায় দিবেন
-কেন
-আমি মন ভইরা চিল্লামু, এত সুখ কিন্তু আমি চিল্লাইতে পারিনা
শেফালি মকবুলের কাধে কামর দেয়, মকবুল গোঙায়, মকবুল ওর বিষন্নতা ঝেড়ে দেয়, আরো বেশি দৃঢ় হয়ে উঠে, পিঠ বাঁকা হয়ে আসে। মকবুল হাসে, আরেকটা বিড়ি ধরায়, শেফালি আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ওর কিশোরি মনে দক্ষিণ মৈশুন্দির লোক জনের কারণে যে আতঙ্ক তা মকবুল বুঝতে পারেনা। 






মকবুল যখন লালবাগের রাস্তা দিয়ে হাঁটে তখন লালবাগের ফর্সা-কালো-লম্বা-খাট বুড়োরা সালাম দিতে থাকে, এদের মাঝে কেউ কেউ হাজ্বী সাব, তারা মকবুলকে সামনের বছর হজ্বে যাওয়ার নসিহত দেয়-' ফরয কামডা তো কইরা ফালাইলা, এলা হজ্ব ভি কইরা ফালাও'
মকবুল আগ্রহের সাথে মুরুব্বিদের বলে-'হ করমু, নিয়ত করছি সামনের বৎসর যামু, কী কন? খরচা নিয়া ডরাই না'
- তা ডরাইবা কেলা, তোমার বদনা-উদনা তো ভালাই বেচা-বিক্রি হয়।
মকবুল আর এলাকার বিভিন্ন বর্ণ আর গোত্রের বুড়োদের সাথে এই সব বাতচিত হয় , ঘুরেফিরে মকবুল বারবার বলে যে, খরচ টরচ তার জন্য ব্যাপার না, ফ্যাক্টরির ম্যানেজার কাজে ফাঁকি না দিলে সে এই বছরই হজ্বে যেত।  



লালবাগ এবং এর আশেপাশের এলাকার লোকেরা অনেকেই মকবুলের সাথে নিজের মেয়ে-ভাতিজি-ভাগ্নি -বোনের বিয়ে দিতে চেয়েছিল কিন্তু মকবুল সবাইকে বারবার নিজের পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে অত্যন্ত গরীবের একটা বিয়ে করেছে। লোকজন কানাকানি করে-' হালার মাথায় কিরিঞ্চি আছে কইলাম, এমুন মাইয়্যারে কেলা বিয়া করল'। কেউ কেউ এর প্রতিবাদ জানায়, বলে উঠে শেফালির রূপের আর গুনের কথা। তারা এও জানতে পারে যে, অতি শীঘ্রই তাদের পায়খানায় শেফালির নামের বদনা থাকবে। এলাকার ফর্সা-কালো-লম্বা-খাটো বুড়োরা বলাবলি করতে থাকে মকবুল এই এলাকায় কিভাবে এসেছিল, কিভাবে কাগজ কুড়াতে কুড়াতে এখন ফ্যাক্টরির মালিক, রূপকথার মত ঘুরতে থাকে মকবুলের গল্প, এলাকার চ্যাংরা ছেলেরা মকবুলের মত হতে চায়। 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দক্ষিণ মৈশুন্দি কিংবা ভূতের গলিতে মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে (3)

কোথায় পাব তারে  মোহাম্মদ শহীদুল হক সাব ৯-৫টা চাকরি করেন। ৫টার একমিনিটও বেশি সময় তিনি অফিসে দিতে চান না,যদিনা কেউ তার বিপরীত পাশের চেয়ারে বসে না থাকে। উঁনার বিভাগের উঁনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় কাজের গতি ও সময় নির্ধারণ উঁনার হাতেই বর্তায়। আমরা বলতে পারি এই ৯-৫টার মধ্যকার এক ঘন্টা সময়ও উঁনি নষ্ট করেন না, বাইরের অনাকাঙ্খিত কেউ আসলে প্রবেশমুখে পিওন আঁটকে দেয়, বলে দেয় স্যার অফিসে নেই। এটা মোহাম্মদ শহীদুল হক সাব ইচ্ছা করেই করেন; না বলে আমরা বলতে পারি এটা তার অভিজ্ঞতা ও পেশা গত দক্ষতা যে উঁনি উটকো লোক এড়িয়ে চলতে পারেন, আর যেহেতু সরকারি চাকরি তাই এখানে ভোক্তা সন্তুষ্টি বা আম জনতার সাথে সম্পর্ক রাখারও কিছু নেই, প্রাইভেট কোম্পানিতে যেভাবে ক্লায়েন্ট সার্ভিস বা অন্যান্য যোগাযোগ মেনে চলার একটা দায় বর্তায়, সরকারি চাকরিতে এসব থাকে না। প্রতি সোম  আর বুধবার মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে বিভাগীয় প্রধান, সচিবসহ অন্যান্যরা মিটিং করেন রুটিন অনুযায়ী।  মোহাম্মদ শহীদুল হক সাব সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে তাঁর পিতৃ নিবাসে চলে যান, এখানে উঁনি আর কাজের লোক শাহ আলম ছাড়া কেউ থাকে না, শাহ আলম উঁনার ব্যক্তিগত...

দক্ষিণ মৈশুন্দি কিংবা ভূতের গলিতে মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে (2)

                          পর্ব ২- শেপালি মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে আমার কিংবা আমাদের পরিচয়ের প্রথম পর্বে শেফালির বিয়ে হয়ে যায়। আবার আমাদের সিদ্ধান্তেও আশা যাবেনা যে শেফালির বিয়ে হয়েছে , ওর তো বিয়ে হবার কথা ছিল, বিয়ে হয়েছিল কিনা সেটা আমরা এই গল্পের শেষে জানতে পারব , হয়তোবা পারবনা। আমরা কেউ শেফালির গ্রামের বাড়ির ঠিকানা না জানাতে ওর বিয়েতে উপস্থিত হতে পারিনি ব্যাপারটা আসলে এমন নয়, শেফালি কিংবা শেফালির বাবা আমাদের কাউকেই বলে যায়নি অথবা বিয়ের দাওয়াত আমরা পাইনি।  ভেজা হাত ধরতে ধরতে হঠাৎ একদিন আর জানালা খুলতে না পেরে আমি বুঝতে পারলাম হয়তো খুব ভোরেই শেফালি বাড়ি ছেড়েছে,শুধু জানতে পাইনি কিংবা জানতে পেরেও আমি পরেরদিন আমার নির্ধারিত সময়ে জানালায় হাত দেয়ার পরক্ষণেই এলাকার দোকানদার মন্ডল জানালো -'শেপালি তো গেছেগা, আন্ধার কাটোনের আগ দিয়াই গেছেগা'। আমি আগে থেকে জানতাম এমন ভাব করে বললাম-'হ, কইতাছিল যাইবগা, অর বাপে নিহি আইছিল, বুইড়া কইছে ওরে যেন না বিছড়াই'। মন্ডল আমার কথা বিশ্বাস করলো কী করলো না তার অপেক্ষায় না থেকে আমি পা বা...

নিমাইকে ঘিরে কিছু প্রশ্ন

সময়টা তখনও দুপুর হয়নি,কৃষক নিমাইকে উষ্কখুষ্ক অবস্থায় মাঠে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কেউ হয়তো তাকে খেয়াল করছে, কেউ হয়তো করছে না। নিমাইয়ের পাশের ক্ষেতে চাষীরা কাজ করছে। এমন কর্মব্যস্ত দিনে নিমাইকে গালে হাত দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকতে দেখে কারো মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে, কারো হয়তো জাগছে না। পাশের ক্ষেতগুলোতে   কাজ করছে ভূমিহীন বর্গাচাষী ইদ্রিছ মিয়া,দীর্ঘদেহী সোলায়মান আর প্রাণেশ। তারা কেউ কেউ নিমাইয়ের কুশল জিজ্ঞাসা করে, কেউ করেনা।  নিমাই একজন বর্গাচাষী এবং অবশ্যই অস্বচ্ছল। অভাব অনটন যে তার এবং তার জাতের নিত্যসঙ্গী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্গাচাষীদের নিজের জমি থাকে না,অন্যের জমিতে তারা চাষ করে বিনিময়ে অর্ধেক অথবা তিন ভাগের এক ভাগ ফসল পায় এবং তা দিয়ে তাদের সারা বছরের অভাব কোনক্রমেই ঘুচে না। তাদের বছর বছর বংশ বৃদ্ধি পায়, প্রবীন একজনের হয়তো মৃত্যু হয়,যুবক আর কিশোরীদের বিয়ে হয়,যুবতী বোন হয়তো স্বামী পরিত্যাক্তা হয় কিন্তু তিন অক্ষরের অভাবটাই ঘুচে না।   নিমাইয়ের ঘরে স্বাভাবিকভাবেই হোক অথবা বাধ্য হয়েই হোক এক বউ। মুসলমান হলেও সে দুই অথবা তিন বউ রাখতে পারত না। এর জন্য আর্থিক সঙ্গতি...