সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিএসএফের নিষ্ঠুরতা এবং আরেকজন ফেলানী


বিএসএফের নিষ্টুরতা এবং আরেকটি কান্ডজ্ঞানহীন হত্যাকান্ডের মাধ্যমে মারা গেল আরেকজন বাংলাদেশী। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের বানারভিটা গ্রামের দিনমজুর নুরুল ইসলামের মেয়ে ফেলানীকে (১৫) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা গুলি করে হত্যা করেছে। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। নুরুল দিনমজুরি করে সংসার চালান। সংসারে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। তাঁরা সবাই ভারতের দিল্লিতে ইটভাটায় কাজ করেন। কাজ করে কিছু টাকা জমা হওয়ার পর ফেলানীকে বিয়ে দিতে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসছিলেন। গতকাল রাতে ফেলানীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলো না নুরুলের ।

দেশে ফিরতে বুধবার বিকেলে দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গের চৌধুরীহাট সীমান্তে আসেন নুরুল ও ফেলানী। সীমানা পার হতে দালালের সহায়তা নেন তাঁরা। বুধবার রাত থেকে অনেকবার চেষ্টা করেও সীমানা পার হতে পারেননি।, নুরুল ও ফেলানী ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সীমানা পার হওয়ার চেষ্টা করেন। নুরুল প্রথমে মই বেয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে আসেন। ফেলানী মইতে উঠলে তার কাপড়চোপড় কাঁটাতারে আটকে যায়। এ সময় সে ভয়ে চিৎকার শুরু করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিএসএফের বুলেট তার বুক ঝাঁজরা করে দেয়।।মৃত্যুর পরও দীর্ঘ সময় ফেলানীর লাশ সীমান্তের কাঁটাতারের সঙ্গে ঝুলতে থাকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সীমান্তের মানুষ। বেলা সাড়ে ১১টায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ সরিয়ে নেয় বিএসএফ।
গতকাল নাগেশ্বরীর বানারভিটা গ্রামে নিহত ফেলানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা নুরুল ইসলাম মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায়।

সীমান্তবাসী ও বিডিআর সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের ৩ ও ৪ সাব পিলারের কাছ দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের টহল দল অতর্কিত গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই ফেলানীর মৃত্যু হয়।

বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান গতকাল বিবিসিকে বলেছেন, ‘বিএসএফ মাঠপর্যায়ের নিয়মনীতি (গ্রাউন্ড রুল) বারবার ভঙ্গ করছে। গ্রাউন্ড রুলে এ জাতীয় অনুপ্রবেশের ঘটনায় কোনো অবস্থায় গুলি ছোড়া যাবে না। কিন্তু বিএসএফকে কীভাবে বোঝানো যায়, আমি জানি না। এর আগে যতবার বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, তারা সব সময় বলেছে, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। বছর খানেক আগে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়, এরপর আর গুলির ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু ওই দিনই গুলি ছুড়েছে বিএসএফ। তারপরও বারবার গুলি ছুড়েছে।’ নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করছে, এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত বিএসএফের সদস্যদের বিচার হওয়া উচিত। তাদের এ মনোভাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান বলেন, বিচার করা হলে বিএসএফ গুলি করার আগে অন্তত চিন্তা করবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, কেবল গত বছর ৭৪ জন বেসামরিক নাগরিক বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিদিনই বিএসএফের হাতে মারা পড়ছে এক বা একাধিক বাংলাদেশী। বাংলাদেশ সরকার,পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং বিডিআর একাধিকবার ভারত ও বিএসএফের সাথে বৈঠক করেও এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি বিচার তো দূরের কথা। অসচেতনতাবশত প্রতিনিয়তই অনেক বাংলাদেশী নাগরিক সীমান্তের কাছাকাছি চলে যায় বা অবৈধভাবে সীমানা পার হতে চায়। শুধু বাংলাদেশীরাই যে এমন কান্ড ঘটায় তা না । প্রতিনিয়তই ভারতীয় গরু,শাড়ি,মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে । কখনো কখনো তারা ধরা পড়ছে , কখনো পড়ছে না । কিন্তু কখনোই বিডিআর বা বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাদের মারা পড়ার কাহিনী শোনা যায় না বা ঘটে না । বাংলাদেশ সরকার ভারতের সাথে সম্প্রতি একটি বড় ধরণের চুক্তি করে আসলো। পুরো চুক্তির কথা এখনো আমরা জানি না । বাংলাদেশ সরকারের অতীত এবং বর্তমান দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণেই এ সমস্যার সমাধান করা যায়নি।আর কতো ফেলানী অসহায় এবং নির্বিচারে মারা গেলে বাংলাদেশ সরকার কঠোর হবে বিএসএফের এমন মনোভাবের প্রতি। শুধু কী বিএসএফেরই দোষ এতে? আমার তো তা মনে হয় না। ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থন না থাকলেও পরোক্ষ সমর্থন যে আছে তা বলার আর দরকার নেই। ভারত সরকারের বাংলাদেশের প্রতি এমন নিষ্ঠুর এবং মালিকসূচক মনোভাব বাংলাদেশের জনগণকে ভারতবিদ্বেষী হতে বাধ্য করছে। ভারতের সাথে সরকার নানা রকম সমর্থনযোগ্য এবং অসমর্থনযোগ্য চুক্তি করে বেড়াচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকদের সীমান্তে হত্যা করার ব্যাপারটা নিয়ে এখনো জোরালোভাবে কিছু করছে না দেখে আমিসহ বাংলাদেশের অনেক সাধারন নাগরিক হতাশ। বিশেষ করে তারা যারা এই সরকারের প্রতি অনেক আশা রেখে তাদের নির্বাচিনে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা এনে দিয়েছিল। হতাশ সেই সীমান্তবাসীরা যারা নির্ঘুম রাত কাটায় সীমান্তে। আতঙ্কিত সেই সীমান্তবাসী বাবা যার প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ে ঘরে ।কখন বিএসএফ ঘরে ঢুকে যায়। হ্যা পাঠক , অবস্থা এখন তাই। বিএসএফ দিনে দুপুরে সীমান্তে প্রবেশ করে পুকুর থেকে মাছ মেরে যায়। হা করে তাকিয়ে দেখে পুকুরের মালিক, হা করে তাকিয়ে দেখে গ্রামবাসী। হা করে তাকিয়ে দেখা ছাড়া তাদের কীইবা করার আছে। তাদের নিরাপত্তা কে দিবে? তাদের নিরাপত্তা দেবার কথা কাদের? কোন সরকার কী পারছে রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান করতে? সীমান্তবাসীর আতঙ্ক এখন আমার চোখে, আমার অন্তরে ! বাংলাদেশের সমস্ত নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা চাই ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিমাইকে ঘিরে কিছু প্রশ্ন

সময়টা তখনও দুপুর হয়নি,কৃষক নিমাইকে উষ্কখুষ্ক অবস্থায় মাঠে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কেউ হয়তো তাকে খেয়াল করছে, কেউ হয়তো করছে না। নিমাইয়ের পাশের ক্ষেতে চাষীরা কাজ করছে। এমন কর্মব্যস্ত দিনে নিমাইকে গালে হাত দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকতে দেখে কারো মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে, কারো হয়তো জাগছে না। পাশের ক্ষেতগুলোতে   কাজ করছে ভূমিহীন বর্গাচাষী ইদ্রিছ মিয়া,দীর্ঘদেহী সোলায়মান আর প্রাণেশ। তারা কেউ কেউ নিমাইয়ের কুশল জিজ্ঞাসা করে, কেউ করেনা।  নিমাই একজন বর্গাচাষী এবং অবশ্যই অস্বচ্ছল। অভাব অনটন যে তার এবং তার জাতের নিত্যসঙ্গী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্গাচাষীদের নিজের জমি থাকে না,অন্যের জমিতে তারা চাষ করে বিনিময়ে অর্ধেক অথবা তিন ভাগের এক ভাগ ফসল পায় এবং তা দিয়ে তাদের সারা বছরের অভাব কোনক্রমেই ঘুচে না। তাদের বছর বছর বংশ বৃদ্ধি পায়, প্রবীন একজনের হয়তো মৃত্যু হয়,যুবক আর কিশোরীদের বিয়ে হয়,যুবতী বোন হয়তো স্বামী পরিত্যাক্তা হয় কিন্তু তিন অক্ষরের অভাবটাই ঘুচে না।   নিমাইয়ের ঘরে স্বাভাবিকভাবেই হোক অথবা বাধ্য হয়েই হোক এক বউ। মুসলমান হলেও সে দুই অথবা তিন বউ রাখতে পারত না। এর জন্য আর্থিক সঙ্গতি...

দক্ষিণ মৈশুন্দি কিংবা ভূতের গলিতে মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে (2)

                          পর্ব ২- শেপালি মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে আমার কিংবা আমাদের পরিচয়ের প্রথম পর্বে শেফালির বিয়ে হয়ে যায়। আবার আমাদের সিদ্ধান্তেও আশা যাবেনা যে শেফালির বিয়ে হয়েছে , ওর তো বিয়ে হবার কথা ছিল, বিয়ে হয়েছিল কিনা সেটা আমরা এই গল্পের শেষে জানতে পারব , হয়তোবা পারবনা। আমরা কেউ শেফালির গ্রামের বাড়ির ঠিকানা না জানাতে ওর বিয়েতে উপস্থিত হতে পারিনি ব্যাপারটা আসলে এমন নয়, শেফালি কিংবা শেফালির বাবা আমাদের কাউকেই বলে যায়নি অথবা বিয়ের দাওয়াত আমরা পাইনি।  ভেজা হাত ধরতে ধরতে হঠাৎ একদিন আর জানালা খুলতে না পেরে আমি বুঝতে পারলাম হয়তো খুব ভোরেই শেফালি বাড়ি ছেড়েছে,শুধু জানতে পাইনি কিংবা জানতে পেরেও আমি পরেরদিন আমার নির্ধারিত সময়ে জানালায় হাত দেয়ার পরক্ষণেই এলাকার দোকানদার মন্ডল জানালো -'শেপালি তো গেছেগা, আন্ধার কাটোনের আগ দিয়াই গেছেগা'। আমি আগে থেকে জানতাম এমন ভাব করে বললাম-'হ, কইতাছিল যাইবগা, অর বাপে নিহি আইছিল, বুইড়া কইছে ওরে যেন না বিছড়াই'। মন্ডল আমার কথা বিশ্বাস করলো কী করলো না তার অপেক্ষায় না থেকে আমি পা বা...

ট্রলার

পান চিবাইতে চিবাইতে আব্দুর রহমান বাড়ি ফিরে। দুপুরে খাবারের পর সে নিয়ম করে ঘর থেকে বাইর হয়, তা যতই বৃষ্টি হোক কিংবা ঠাডা পড়া রোদই হোক না কেন, রশিদের দোকান থেকে সে পান কিনে, হালকা জর্দা দেয়া, একটু চুন সাথে সুপারি দেয়া অর্ধেক পান খাবে সে এবং শেষ পিকটা ফেলবে সে তার বাড়ির দরজার পাশের দেয়ালে আর এভাবেই ঐ দেয়ালটার নিচের সম্পূর্ণ অংশ সবসময় লাল হয়ে থাকে। আব্দুর রহমান চল্লিশোর্ধ্ব, কোন কারনে সে এলাকায় গরুর ব্যাপারী হিসেবে পরিচিত, তাকে সবাই আব্দুর রহমান বেপারী ডাকে, তবে লোকে তাকে কেন গরুর ব্যাপারী ভাবে সে আজো ঠাওর করতে পারেনা, কোনদিন ঘোর লাগা এক বর্ষার রাতে সে কলিমুদ্দি ব্যাপারীর সাথে তাস খেলতে খেলতে হয়তো গরুর বেপার নিয়ে দুই একটা কথা বলছিল তাতেই কি লোক তাকে ব্যাপারী নাম দিল নাকি তা নিয়ে সে প্রায়ই ভাবে এবং ভাবতে ভাবতে কোন কুল কিনারা না করতে পেরে মাছের ট্রলার আজো কেন ফিরল না সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়। আব্দুর রহমানের আসল কাজ মিয়া বাড়ির আটটা ট্রলার দেখা শোনা করা, এবং এই এলাকায় যে আর কারো দুই একটার বেশি ট্রলার সে বাড়তে দেয়না এইটা জানার কারণে মিয়া বাড়ির বড় মিয়া তাকে বেশ স্নেহ করে আর এই স্নেহ মাঝে মধ্যে বাড়...