সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটি গর্ভপাত ও একটি আত্মহত্যা


গভীর রাত পারি দিলাম চুপ করে মনের গুপ্ত অপরাধবোধ চাপা দিয়ে। ভোর হল,পাখির কলকাকলিতে পূর্ণ পৃথিবী। আমি চোরের মত চুপ করে প্রবেশ করলাম কবরস্থানে। ছোট্ট একটি অদৃশ্য কবর। ভেতরে গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে একটি শিশু।বয়স মাত্র ২ মাস ৯ দিন। আসলে ওর ভ্রুণটার বয়সই ঐটা। জিজ্ঞেস করলাম -বাবা,কিছু খাবে?

-“তুমি আমাকে রেখে চলে যাও কেন বারবার?”

আমি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমার তো কিছু বলার ভাষা নেই যে কয়টা ভাষায় কথা বলতে পারি সবগুলো আজ আমাকে ছেড়ে পালাচ্ছে আমি আর কোনদিনই কথা বলতে পারব না কবরের ফলকটা আবারও এক পলক দেখে নিলাম-


নামঃঅজ্ঞাত, পিতাঃ অজ্ঞাত, মাতাঃঅজ্ঞাত।

জন্ম-২০/১০/২০০০,মৃত্যু-২৮/১২/২০০০।


আমার বুক আবারো কেঁপে উঠল। চোখ বেঁয়ে নামল অশ্রু। আমার অপরাধ আমি এই ভ্রুণটাকে হত্যা করেছি । আমার অপরাধ আমি সম্মতি দিয়েছি ভ্রুণটাকে হত্যা করতে। আমার এবং আমার প্রেমিকার ভালবাসার ফল। আমাদের মিলনে ফলে যে ভ্রুণটির জন্ম তাকে আমরা মেরে ফেলেছি। আমার জন্যই আমার প্রেমিকা গর্ভপাত করিয়েছে। আমার জন্যই ও এত কষ্ট সয়েছে। আমার সামাজিক অবস্থান শক্ত নয়। আমার বাবুটাকে খাওয়ানোর টাকা নেই। আরে আমিইতো এখনো বাবার টাকায় চলি। তবে সেগুলো কোন ব্যাপার ছিল না। দরকার ছিল আমার সাহস যা আমার কোন কালেই ছিল না । আমার আত্মবিশ্বাস এর অভাব ছিল । আমার প্রেমিকা এখনো কাঁদে। লুকিয়ে, প্রকাশ্যে। আমি কাঁদিনা। আমি যে অপরাধী। অপরাধীরা কাঁদে না, পুঁড়িয়ে দেয় আত্মাটাকে। আজ আমার আত্মা পোঁড়া। এই ঘা কখনোই শুকাবে না ।
-বাবা
-হু
-আমার নাম রাখবে না কখনো ?
-কী জানি
-কেন?
-নাম রেখে কী হবে!
-আচ্ছা আমি ছেলে না মেয়ে?
-তুমি শিশু,তুমি দেবতা,তুমি দেবশিশু।
-বাবা
-হু
-আমাকে মেরে ফেললে কেন?
- আমাকে মাফ করে দাও
-মা কই?
-মা বাসায়
-কী করে?
-ঘুমাচ্ছে হয়তো
- তুমি ঘুমাওনি?
-হ্যা ঘুমিয়েছি
-আমাকে দেখতে এসেছ?
-হু
-চলে যাবে একটুপরে?
-হু
-আমার না ভয় লাগে
-আমি আবার আসব
-কখন?
-কালকে
-আমি যে ভয় পাব
-তোমার কিছুই হবে না
-কালকে আমাকে বাসায় নিবে বাবা?
-তুমি যাবে?
-হ্যা,মাকে দেখব
-মাকে নিয়ে আসব কালকে
-আমাকে বাসায় নিবে না?
-তোমার জন্য খেলনা নিয়ে আসব
-আমাকে নিতে তোমার এতই অসুবিধা?
আমি আর থাকতে পারলাম না । ছুটে বেরিয়ে গেলাম কবরস্থান থেকে। চায়ের দোকান থেকে চা খেলাম। জীবনের শেষ চা। খেয়ে বাসায় যাব। আমার টেবিলের ড্রয়ারে ঘুমের ঔষধ আছে এক পাতা। এরপর আমার মৃত্যু অবধারিত। আমি জানি আমার মৃত্যু হলে আমি চলে যেতে পারব আমার সন্তানের কাছে। ওর সাথেই থাকব। ওর আর ভয় লাগবে না । আমি থাকতে ওর ভয় নেই ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিমাইকে ঘিরে কিছু প্রশ্ন

সময়টা তখনও দুপুর হয়নি,কৃষক নিমাইকে উষ্কখুষ্ক অবস্থায় মাঠে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কেউ হয়তো তাকে খেয়াল করছে, কেউ হয়তো করছে না। নিমাইয়ের পাশের ক্ষেতে চাষীরা কাজ করছে। এমন কর্মব্যস্ত দিনে নিমাইকে গালে হাত দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকতে দেখে কারো মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে, কারো হয়তো জাগছে না। পাশের ক্ষেতগুলোতে   কাজ করছে ভূমিহীন বর্গাচাষী ইদ্রিছ মিয়া,দীর্ঘদেহী সোলায়মান আর প্রাণেশ। তারা কেউ কেউ নিমাইয়ের কুশল জিজ্ঞাসা করে, কেউ করেনা।  নিমাই একজন বর্গাচাষী এবং অবশ্যই অস্বচ্ছল। অভাব অনটন যে তার এবং তার জাতের নিত্যসঙ্গী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্গাচাষীদের নিজের জমি থাকে না,অন্যের জমিতে তারা চাষ করে বিনিময়ে অর্ধেক অথবা তিন ভাগের এক ভাগ ফসল পায় এবং তা দিয়ে তাদের সারা বছরের অভাব কোনক্রমেই ঘুচে না। তাদের বছর বছর বংশ বৃদ্ধি পায়, প্রবীন একজনের হয়তো মৃত্যু হয়,যুবক আর কিশোরীদের বিয়ে হয়,যুবতী বোন হয়তো স্বামী পরিত্যাক্তা হয় কিন্তু তিন অক্ষরের অভাবটাই ঘুচে না।   নিমাইয়ের ঘরে স্বাভাবিকভাবেই হোক অথবা বাধ্য হয়েই হোক এক বউ। মুসলমান হলেও সে দুই অথবা তিন বউ রাখতে পারত না। এর জন্য আর্থিক সঙ্গতি...

দক্ষিণ মৈশুন্দি কিংবা ভূতের গলিতে মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে (2)

                          পর্ব ২- শেপালি মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে আমার কিংবা আমাদের পরিচয়ের প্রথম পর্বে শেফালির বিয়ে হয়ে যায়। আবার আমাদের সিদ্ধান্তেও আশা যাবেনা যে শেফালির বিয়ে হয়েছে , ওর তো বিয়ে হবার কথা ছিল, বিয়ে হয়েছিল কিনা সেটা আমরা এই গল্পের শেষে জানতে পারব , হয়তোবা পারবনা। আমরা কেউ শেফালির গ্রামের বাড়ির ঠিকানা না জানাতে ওর বিয়েতে উপস্থিত হতে পারিনি ব্যাপারটা আসলে এমন নয়, শেফালি কিংবা শেফালির বাবা আমাদের কাউকেই বলে যায়নি অথবা বিয়ের দাওয়াত আমরা পাইনি।  ভেজা হাত ধরতে ধরতে হঠাৎ একদিন আর জানালা খুলতে না পেরে আমি বুঝতে পারলাম হয়তো খুব ভোরেই শেফালি বাড়ি ছেড়েছে,শুধু জানতে পাইনি কিংবা জানতে পেরেও আমি পরেরদিন আমার নির্ধারিত সময়ে জানালায় হাত দেয়ার পরক্ষণেই এলাকার দোকানদার মন্ডল জানালো -'শেপালি তো গেছেগা, আন্ধার কাটোনের আগ দিয়াই গেছেগা'। আমি আগে থেকে জানতাম এমন ভাব করে বললাম-'হ, কইতাছিল যাইবগা, অর বাপে নিহি আইছিল, বুইড়া কইছে ওরে যেন না বিছড়াই'। মন্ডল আমার কথা বিশ্বাস করলো কী করলো না তার অপেক্ষায় না থেকে আমি পা বা...

ট্রলার

পান চিবাইতে চিবাইতে আব্দুর রহমান বাড়ি ফিরে। দুপুরে খাবারের পর সে নিয়ম করে ঘর থেকে বাইর হয়, তা যতই বৃষ্টি হোক কিংবা ঠাডা পড়া রোদই হোক না কেন, রশিদের দোকান থেকে সে পান কিনে, হালকা জর্দা দেয়া, একটু চুন সাথে সুপারি দেয়া অর্ধেক পান খাবে সে এবং শেষ পিকটা ফেলবে সে তার বাড়ির দরজার পাশের দেয়ালে আর এভাবেই ঐ দেয়ালটার নিচের সম্পূর্ণ অংশ সবসময় লাল হয়ে থাকে। আব্দুর রহমান চল্লিশোর্ধ্ব, কোন কারনে সে এলাকায় গরুর ব্যাপারী হিসেবে পরিচিত, তাকে সবাই আব্দুর রহমান বেপারী ডাকে, তবে লোকে তাকে কেন গরুর ব্যাপারী ভাবে সে আজো ঠাওর করতে পারেনা, কোনদিন ঘোর লাগা এক বর্ষার রাতে সে কলিমুদ্দি ব্যাপারীর সাথে তাস খেলতে খেলতে হয়তো গরুর বেপার নিয়ে দুই একটা কথা বলছিল তাতেই কি লোক তাকে ব্যাপারী নাম দিল নাকি তা নিয়ে সে প্রায়ই ভাবে এবং ভাবতে ভাবতে কোন কুল কিনারা না করতে পেরে মাছের ট্রলার আজো কেন ফিরল না সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়। আব্দুর রহমানের আসল কাজ মিয়া বাড়ির আটটা ট্রলার দেখা শোনা করা, এবং এই এলাকায় যে আর কারো দুই একটার বেশি ট্রলার সে বাড়তে দেয়না এইটা জানার কারণে মিয়া বাড়ির বড় মিয়া তাকে বেশ স্নেহ করে আর এই স্নেহ মাঝে মধ্যে বাড়...