সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পঙ্গু রাষ্ট্রের পঙ্গু শত্রু


“ ঝালকাঠীতে র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে পা হারানো কলেজছাত্র লিমন হোসেনের বাবা ,মা ও ভাইসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন র‌্যাবের সোর্স হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম হাওলাদার। বৃহস্পতিবার ঝালকাঠী জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে করা এই মামলায় ইব্রাহিম তার শ্যালক ফোরকান হাওলাদারকে হত্যার অভিযোগ এনেছেন, যিনি তিন দিন আগে মারা যান। মামলায় লিমনের বাবা তোফাজ্জেল আকন, মা হেনোয়ারা বেগম ও বড় ভাই সুমন আকনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ঈদের দিন বিকালে লিমন ও তার মায়ের ওপর হামলার অভিযোগে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাজাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন হেনোয়ারা বেগম। ওই হামলার কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে ইব্রাহিমের শ্যালক ফোরকানের (৩৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। তার লাশের ময়নাতদন্তও হয়েছে। লিমনের ভাই ও তার আত্মীয়-স্বজনদের হামলায় ফোরকান মারা গেছেন দাবি করে ইব্রাহিমের স্ত্রী লিলি বেগম মঙ্গলবার থানায় একটি অভিযোগ করলেও পুলিশ তা অপমৃত্যু মামলা হিসাবে গ্রহণ করে।”                                    - সূত্রঃ বিডিনিউজ ২৪ ডট কম।

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে কে বা কারা ইব্রাহিমের শ্যালককে হত্যা করল? এটাতে কি আদৌও লিমন বা তার আত্মীয় স্বজনের যোগসাজশ আছে কিনা ? অত্যন্ত হাস্যকর হলেও করুণ যে লিমনের পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের হয়েছে। মামলায় আরো আসামী থাকলেও লিমনের পরিবারের তিন সদস্যকেই প্রধান আসামী করা হয়েছে । আরো হাস্যকর, ঘটনার সময় লিমনের মা ও লিমন হাসপাতালে ছিল আর লিমনের বাবা  ছিলেন ঢাকায়। উল্লেখ্য যে, ঈদের দিন বিকালে লিমন ও তার মায়ের উপর হামলা চালায় ইব্রাহিম যে কিনা র‍্যাবের সোর্স এবং একই সাথে স্থানীয় মাস্তান।

গত বছর ঝালকাঠির লিমন মাঠে গরু আনতে গিয়ে লিমন র‍্যাবের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় এবং একটি পা হারায় । র‍্যাব নামক রাষ্ট্রীয় এই লাঠিয়াল বাহিনী ঐ ঘটনার পরে ক্ষমা প্রার্থনা তো দূরে থাক উল্টো একের পর মিথ্যা মামলা দিতে থাকে লিমন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। লিমন ও তার পরিবারকে দেয়া হচ্ছে হত্যার হুমকি। তাদের বলা হয়েছে মিডিয়ার ফোকাস একটু কমে গেলেই তাদের মেরে ফেলা হবে। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে সরকার ও রাষ্ট্রের সমর্থনেই এসব হচ্ছে । গণমাধ্যমগুলোতে একের পর এক প্রতিবাদ করার পরও আদালত , রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী কারোরই কোন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না ব্যাপারটায়। এবং রহস্যজনক ভাবে নির্লিপ্ত আমাদের সুশীল সমাজ । যেন আমরা এক মগের মুল্লুকে বাস করছি, দেশটা যেন একটা শিশু পার্ক যে যেমন ইচ্ছে খেলছে !
লিমন ইস্যু এখন কোন এলিট বাহিনীর সাথে কোন সাধারণ নাগরিকের ইস্যু নয়। এটা এখন মানবতার সাথে অমানবিকতার ইস্যু। এটা এখন কোন ব্যক্তিগত বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা রাষ্ট্রের নগ্নতার বহিঃপ্রকাশ । রাষ্ট্র নগ্ন হলেই সম্ভব এমন হীন কাজ করা। রাষ্ট্র দলবাজী,সন্ত্রাসের মদদদাতা হলেই সম্ভব ন্যাংটো হয়ে যুদ্ধ ঘোষণার। যুদ্ধটা কার সাথে? একজন গরিব,রাষ্ট্র দ্বারা পঙ্গু ছেলের সাথে ? নাকি নিজেদের স্বরূপ প্রকাশ হবে বলে অত্যাচারের মাত্রাটা বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে? রাষ্ট্র কি তবে অসহায় ? নাগরিকদের অসহায় করে রাখার মধ্যেই ভঙ্গুর এই রাষ্ট্রের জয় ?

লিমনের স্বপ্ন ছিল, সে সাধারণ ছাত্র। সে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন করত না । সে পড়াশোনা করত, গরিব পরিবারের সন্তান বিধায় তার সুযোগ-সুবিধা কম ছিল। কিন্তু সে কেন রাষ্ট্র কর্তৃক বারবার অপদস্থ হবে, রাষ্ট্রের এই ক্ষমতা কে দিয়েছে ? তাহলে একটি অগণতান্ত্রিক দেশের সাথে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পার্থক্যটা কোথায় ? মহাজোটকে মানুষ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল তাদের অপূরণীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে। কিন্তু এটা কী আমাদের স্বপ্ন ছিল ? এই মহাজোট তাদের নির্বাচনি ম্যানুফেস্টুতে বিনাবিচারে হত্যা বন্ধ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই তার প্রতিশ্রুতি !


একজন পঙ্গু নাগরিক যখন রাষ্ট্রের প্রধানতম শত্রু বলে বিবেচিত হয় (অন্তত আচরণে) তখন আমার এই রাষ্ট্র, সরকার, সরকারের সামরিক-আধা সামরিক বাহিনীসহ গোটা রাষ্ট্রকে পঙ্গু বলতে দ্বিধা হয়না। লিমন একজন অসহায় নাগরিক, তাকে সাহায্য বা সাহস দেবার কেউ নেই । কিন্তু তার চেয়েও বড় অসহায় আমাদের বাংলাদেশ নামন রাষ্ট্রটি। মান বাঁচাতে এখন তার জান নিয়ে টান দিতে হচ্ছে। কার জান? – যারা তাদের ক্ষমতা দিয়েছে, স্বপ্ন বাঁচানোর জন্য। এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিচার হবে বলে আশা রাখিনা। বেশিরভাগ রাষ্ট্রীয় অপরাধ-সন্ত্রাসের বিচার হয়না। রাষ্ট্র তখনই পরাক্রমশালী যখন তার নাগরিকদের অধিকার সমুন্নত থাকে,গরিব ও মেহনতি মানুষ সুখে থাকে। আর রাষ্ট্র তখনই পঙ্গু হয় যখন পঙ্গু লিমন তাদের শত্রু হয় ।  

https://www.facebook.com/notes/sayem-choudhury/%E0%A6%AA%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%81-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%81-%E0%A6%B6%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%81/10151124076934182
http://www.mongoldhoni.net/2012/08/26/lame-enemy-of-lame-state/

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিমাইকে ঘিরে কিছু প্রশ্ন

সময়টা তখনও দুপুর হয়নি,কৃষক নিমাইকে উষ্কখুষ্ক অবস্থায় মাঠে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কেউ হয়তো তাকে খেয়াল করছে, কেউ হয়তো করছে না। নিমাইয়ের পাশের ক্ষেতে চাষীরা কাজ করছে। এমন কর্মব্যস্ত দিনে নিমাইকে গালে হাত দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকতে দেখে কারো মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে, কারো হয়তো জাগছে না। পাশের ক্ষেতগুলোতে   কাজ করছে ভূমিহীন বর্গাচাষী ইদ্রিছ মিয়া,দীর্ঘদেহী সোলায়মান আর প্রাণেশ। তারা কেউ কেউ নিমাইয়ের কুশল জিজ্ঞাসা করে, কেউ করেনা।  নিমাই একজন বর্গাচাষী এবং অবশ্যই অস্বচ্ছল। অভাব অনটন যে তার এবং তার জাতের নিত্যসঙ্গী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্গাচাষীদের নিজের জমি থাকে না,অন্যের জমিতে তারা চাষ করে বিনিময়ে অর্ধেক অথবা তিন ভাগের এক ভাগ ফসল পায় এবং তা দিয়ে তাদের সারা বছরের অভাব কোনক্রমেই ঘুচে না। তাদের বছর বছর বংশ বৃদ্ধি পায়, প্রবীন একজনের হয়তো মৃত্যু হয়,যুবক আর কিশোরীদের বিয়ে হয়,যুবতী বোন হয়তো স্বামী পরিত্যাক্তা হয় কিন্তু তিন অক্ষরের অভাবটাই ঘুচে না।   নিমাইয়ের ঘরে স্বাভাবিকভাবেই হোক অথবা বাধ্য হয়েই হোক এক বউ। মুসলমান হলেও সে দুই অথবা তিন বউ রাখতে পারত না। এর জন্য আর্থিক সঙ্গতি...

দক্ষিণ মৈশুন্দি কিংবা ভূতের গলিতে মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে (2)

                          পর্ব ২- শেপালি মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে আমার কিংবা আমাদের পরিচয়ের প্রথম পর্বে শেফালির বিয়ে হয়ে যায়। আবার আমাদের সিদ্ধান্তেও আশা যাবেনা যে শেফালির বিয়ে হয়েছে , ওর তো বিয়ে হবার কথা ছিল, বিয়ে হয়েছিল কিনা সেটা আমরা এই গল্পের শেষে জানতে পারব , হয়তোবা পারবনা। আমরা কেউ শেফালির গ্রামের বাড়ির ঠিকানা না জানাতে ওর বিয়েতে উপস্থিত হতে পারিনি ব্যাপারটা আসলে এমন নয়, শেফালি কিংবা শেফালির বাবা আমাদের কাউকেই বলে যায়নি অথবা বিয়ের দাওয়াত আমরা পাইনি।  ভেজা হাত ধরতে ধরতে হঠাৎ একদিন আর জানালা খুলতে না পেরে আমি বুঝতে পারলাম হয়তো খুব ভোরেই শেফালি বাড়ি ছেড়েছে,শুধু জানতে পাইনি কিংবা জানতে পেরেও আমি পরেরদিন আমার নির্ধারিত সময়ে জানালায় হাত দেয়ার পরক্ষণেই এলাকার দোকানদার মন্ডল জানালো -'শেপালি তো গেছেগা, আন্ধার কাটোনের আগ দিয়াই গেছেগা'। আমি আগে থেকে জানতাম এমন ভাব করে বললাম-'হ, কইতাছিল যাইবগা, অর বাপে নিহি আইছিল, বুইড়া কইছে ওরে যেন না বিছড়াই'। মন্ডল আমার কথা বিশ্বাস করলো কী করলো না তার অপেক্ষায় না থেকে আমি পা বা...

ট্রলার

পান চিবাইতে চিবাইতে আব্দুর রহমান বাড়ি ফিরে। দুপুরে খাবারের পর সে নিয়ম করে ঘর থেকে বাইর হয়, তা যতই বৃষ্টি হোক কিংবা ঠাডা পড়া রোদই হোক না কেন, রশিদের দোকান থেকে সে পান কিনে, হালকা জর্দা দেয়া, একটু চুন সাথে সুপারি দেয়া অর্ধেক পান খাবে সে এবং শেষ পিকটা ফেলবে সে তার বাড়ির দরজার পাশের দেয়ালে আর এভাবেই ঐ দেয়ালটার নিচের সম্পূর্ণ অংশ সবসময় লাল হয়ে থাকে। আব্দুর রহমান চল্লিশোর্ধ্ব, কোন কারনে সে এলাকায় গরুর ব্যাপারী হিসেবে পরিচিত, তাকে সবাই আব্দুর রহমান বেপারী ডাকে, তবে লোকে তাকে কেন গরুর ব্যাপারী ভাবে সে আজো ঠাওর করতে পারেনা, কোনদিন ঘোর লাগা এক বর্ষার রাতে সে কলিমুদ্দি ব্যাপারীর সাথে তাস খেলতে খেলতে হয়তো গরুর বেপার নিয়ে দুই একটা কথা বলছিল তাতেই কি লোক তাকে ব্যাপারী নাম দিল নাকি তা নিয়ে সে প্রায়ই ভাবে এবং ভাবতে ভাবতে কোন কুল কিনারা না করতে পেরে মাছের ট্রলার আজো কেন ফিরল না সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়। আব্দুর রহমানের আসল কাজ মিয়া বাড়ির আটটা ট্রলার দেখা শোনা করা, এবং এই এলাকায় যে আর কারো দুই একটার বেশি ট্রলার সে বাড়তে দেয়না এইটা জানার কারণে মিয়া বাড়ির বড় মিয়া তাকে বেশ স্নেহ করে আর এই স্নেহ মাঝে মধ্যে বাড়...