সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বীরাঙ্গনার থুতু


প্রতিদিন সকালে আহমদ আলির ঘুম থেকে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। তারপর উনার জন্য বেড টি আসে। রকমারি মসলা দিয়ে বানানো স্পেশাল চা। এই চা উনি প্রথম খেয়েছিলেন পাকিস্তান আমলে, নবাব সাহেবের সাথে। নবাব সাহেব সৌখিন ছিলেন, বাঈজির নাচ দেখতে পছন্দ করতেন ভরা মজলিশ নিয়ে। কথিত ছিল উনি একসাথে একাধিক নারীর সাথে সঙ্গম করতে পছন্দ করতেন। আহমদ আলি সাহেব আরও নানা কারণে নবাব সাহেবের ভক্ত ছিলেন। এখনো আছেন,প্রতি শুক্রবার তাই তিনি নবাব সাহেবের জন্য একবার করে কুরআন খতম দেন। অবশ্য মাদ্রাসার ছেলেরাই সে ‘কষ্ট’টা করে। উনার বয়স হয়েছে আর কত! জুম্মার পর তাদেরকে পেট ভরিয়ে গরু ভুনা দিয়ে পোলাও খাইয়ে দেন। নবাব সাহেবের মৃত্যু হয় পূর্ব পাকিস্তান ভারতের হাতে আসার ঠিক আগে। আল্লাহর লাখো শুকরিয়া কাফেরদের শাসন নবাব সাহেবের দেখতে হয়নি। উনি যে আসলেই মুমিন পাকিস্তানি ছিলেন তার বড় প্রমাণ এইটাই। সামান্য একটা গৃহযুদ্ধ নিয়ে আজকে তাদের কত মাতামাতি। আবার নাকি কী নারী নীতি প্রণয়ন হচ্ছে। আল্লাহর পাক কুরআনকে অবমাননার ধৃষ্টতা তারা দেখাচ্ছে। হবে না ! দেশ তো চালাচ্ছে কাফের আর মুশরিকরা। এই ইস্যু নিয়ে অবশ্য তিনি ও তার দল মাঠ গরম করে রাখছেন। তবে এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের কোনই আশা নেই। ক্ষমতায় আসতে হবে ইসলামি শাসনে বিশ্বাসী দল। এর জন্য উনাদের একটা ঐক্যজোটও আছে।

আহমদ আলি সাহেব গোপনে একটি জঙ্গী দলও চালান যার নাম ‘দ্বীন-ঈ-ইসলাম,বাংলাদেশ’। সংগঠনের মূল লক্ষ্য আজকের এই বিভ্রান্ত যুব সমাজকে ইসলামের পথে নিয়ে আসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেল্লাল্পনা করা মেয়েদের নামাজি করা আর সকল মুমিন ভাইদের মসজিদ্গামী করে তাদের ইসলামের সঠিক পথে নিয়ে আসা। আর এর মাধ্যমেই একজন মুমিন ভাই এবং বোন দ্বীন-ঈ-ইসালামের সদস্য হতে অনুপ্রানিত বোধ করবেন। আহমদ আলি সাহেবের আজকে মিটিং আছে ঢাকার বাইরে। ঐখানে দ্বীন-ঈ-ইসলামের গোপন প্রেস। যেখান থেকে তাদের তাত্ত্বিক গুরু আল্লামা শাইখুল হাদীস সাহেবের জিহাদী বই এবং জিহাদ সম্পর্কে আহমদ আলি সাহেবেরও বই বের হয়। সব বইয়েই জিহাদী অনুপ্রেরণামূলক কথা থেকে। যার ফলে মুমিন যুবক ভাই ও বোনেরা জিহাদ করতে উৎসাহ পায়। বইয়ে আরো লেখা থাকে ইহুদি-খৃষ্টান-নাসারা সভ্যতার কথা , তাদের দুর্ভিসন্ধির কথা,তাদের ষড়যন্ত্রের কথা এবং পরিশেষে তাদের কীভাবে নির্মূল করা যায় তার বিস্তারিত।

আহমদ আলি সাহবের মাদ্রাসাও আছে একটা, কওমি মাদ্রাসা। যাতে ঐ মূর্খ বিজ্ঞানের বই একদম পড়ানোই হয় না। যারা কয়দিন পরপর সূর্যকে বড় আর ছোট করে তাদের কথায় যাতে বাচ্চারা ঈমান নষ্ট না করে তার কথাও বলা হয় মাদ্রাসায়। আরো বলা হয় শুধু মুখেই ঈমান আনলেই হবে না নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে জিহাদি বই পড়ে ঈমান পোক্ত করতে হবে। একদম মুমিনের সার্থকতা এইখানেই যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ইসলামের মূল কথা বুকে ধারণ করে। আর ইসলাম বলে যতোদিন এই পৃথিবীর বুকে একজন মুমিনও থাকবে ততোদিন পর্যন্ত জিহাদ অব্যাহত রাখ। আহমদ আলি সাহেবের পরিকল্পনায় আরও অনেক কিছুই আছে। তবে তার আগে তিনি এইরকম মাদরাসা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চান যাতে দ্বীন-ঈ-ঈসলাম বাংলাদেশের সদস্য সংখ্যা আরো কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। এর জন্য দাতা সংগঠনগুলো থেকেও ক্রমাগত চাপ আসছে। বিশ্বের নামি-দামি সব জঙ্গো সংগঠন উনাকে টাকা দেয় সংগঠনকে আরো মজবুত করার জন্য। উনি এই লক্ষে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আহমদ আলি সাহেব অবিচল থাকবেন ইনশাল্লাহ।

আহমদ আলি সাহেবের ঘরে কোন আয়না নেই। এর মূল কারণ অত্যন্ত গোপনীয়। এতোটাই গোপনীয় যে এই কথাটি উনি উনার কোন বিবিকেই বলেন নাই। এই ঘরেও উনি কখনো একলা থাকেন না। চার বিবির এক বিবি অবশ্যই থাকবে, এইটা তার কড়া হুকুম। রাতে উনি না ঘুমানো পর্যন্ত ছোট বিবি পা টিপে দেয়, শরীর ভাল থাকলে এক-আধটুক আদর সোহাগও হয়। চার বিবির সাথে একত্রে সঙ্গম করা উনার সারা জীবনের খায়েশ রয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। তিনবারের পর আর শরীর ‘সাথ’ দেয় না।

উনার ‘গোপন কথা’টার ইতিহাস বেশ পুরোনো। সেই ৭১ এর কাহিনী,যখন কাফের ইন্ডিয়া আর আওয়ামীলীগের মুক্তিবাহিনীর সাথে মুমিন পাক বাহিনীর লড়াই হয়েছিল। পাক বাহিনী ছাড় দেয়াতেই না মুজিব বাহিনী জিতে গেল। সেই সময় - মনে হয় অক্টোবর মাস। উনার বাড়ি থেকে সাহায্যের জন্য দলে দলে লোক আসছে, আর উনি সবাইকে শান্তি বাহিনীর সদস্য করে নিচ্ছেন। এমন সময় গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী কাশেম চাচা তার ভর যৌবনা কন্যাকে নিয়ে উপস্থিত হলেন আহমদ আলি সাহেবের বাড়িতে। যুবক আহমদ আলি কাশেম চাচার মেয়ে জমিলাকে দেখে মনে মনে শায়ের আওড়ালেন-“কসম খুদাকি জো আপকো ইনসান বানায়া
কসম খুদাকি জো আপকো ইনসান বানায়া
মে আগার খুদা হতা তো আপকো চান্দ বানা দেতা।’

যুবক আহমদ কাশেম চাচাকে থেকে যেতে বললেন। বললেন আপনার ও বোন জমিলার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা শান্তিবাহিনী দিবে। কিন্তু কাশেম চাচা স্ত্রী আর ঘর গেরস্তের কথা ভেবে থাকতে পারলেন না। শুধু যাওয়ার আগে আহমদ আলির বুড়ো মাকে বললেন -“বইনগো খালি ইজ্জত বাঁচানির লাগি মাইয়াটারে আপনের হিল্লায় রাইখা গেলাম-আমি গন্ডগোল শেষ হইলেই মাইয়াটারে নিয়া যামু”।

এরপর, আহমদ আলি জমিলাকে এক ভর দুপুরে চা বানিয়ে আনার কথা বলে তার শোবার ঘরে এনে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে পাক বাহিনীর কমান্ডার মিনহাজ খানের হাতে তুলে দিল। পাক বাহিণীর হাতে তুলে দেয়ার আগে জমিলা বারবার বলছিল-“ভাইগো সারাজীবন আপনার বান্দী হয়া থাকুম তাও এগো কাছে আমারে দিয়েন না, ভাই গো আপনে না আমারে বইন ডাকছিলেন!” আর এর জন্যই খালি ঘরে জমিলা বারবার ঘুরে ফিরে আসে তার বিচার চাইতে।আহমদ আলির মুখে একদলা থুতু আর রক্ত ছুড়ে মারে।

[যারা যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার চায় তাদের উৎসর্গ করলাম]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিমাইকে ঘিরে কিছু প্রশ্ন

সময়টা তখনও দুপুর হয়নি,কৃষক নিমাইকে উষ্কখুষ্ক অবস্থায় মাঠে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কেউ হয়তো তাকে খেয়াল করছে, কেউ হয়তো করছে না। নিমাইয়ের পাশের ক্ষেতে চাষীরা কাজ করছে। এমন কর্মব্যস্ত দিনে নিমাইকে গালে হাত দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকতে দেখে কারো মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে, কারো হয়তো জাগছে না। পাশের ক্ষেতগুলোতে   কাজ করছে ভূমিহীন বর্গাচাষী ইদ্রিছ মিয়া,দীর্ঘদেহী সোলায়মান আর প্রাণেশ। তারা কেউ কেউ নিমাইয়ের কুশল জিজ্ঞাসা করে, কেউ করেনা।  নিমাই একজন বর্গাচাষী এবং অবশ্যই অস্বচ্ছল। অভাব অনটন যে তার এবং তার জাতের নিত্যসঙ্গী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্গাচাষীদের নিজের জমি থাকে না,অন্যের জমিতে তারা চাষ করে বিনিময়ে অর্ধেক অথবা তিন ভাগের এক ভাগ ফসল পায় এবং তা দিয়ে তাদের সারা বছরের অভাব কোনক্রমেই ঘুচে না। তাদের বছর বছর বংশ বৃদ্ধি পায়, প্রবীন একজনের হয়তো মৃত্যু হয়,যুবক আর কিশোরীদের বিয়ে হয়,যুবতী বোন হয়তো স্বামী পরিত্যাক্তা হয় কিন্তু তিন অক্ষরের অভাবটাই ঘুচে না।   নিমাইয়ের ঘরে স্বাভাবিকভাবেই হোক অথবা বাধ্য হয়েই হোক এক বউ। মুসলমান হলেও সে দুই অথবা তিন বউ রাখতে পারত না। এর জন্য আর্থিক সঙ্গতি...

দক্ষিণ মৈশুন্দি কিংবা ভূতের গলিতে মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে (2)

                          পর্ব ২- শেপালি মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে আমার কিংবা আমাদের পরিচয়ের প্রথম পর্বে শেফালির বিয়ে হয়ে যায়। আবার আমাদের সিদ্ধান্তেও আশা যাবেনা যে শেফালির বিয়ে হয়েছে , ওর তো বিয়ে হবার কথা ছিল, বিয়ে হয়েছিল কিনা সেটা আমরা এই গল্পের শেষে জানতে পারব , হয়তোবা পারবনা। আমরা কেউ শেফালির গ্রামের বাড়ির ঠিকানা না জানাতে ওর বিয়েতে উপস্থিত হতে পারিনি ব্যাপারটা আসলে এমন নয়, শেফালি কিংবা শেফালির বাবা আমাদের কাউকেই বলে যায়নি অথবা বিয়ের দাওয়াত আমরা পাইনি।  ভেজা হাত ধরতে ধরতে হঠাৎ একদিন আর জানালা খুলতে না পেরে আমি বুঝতে পারলাম হয়তো খুব ভোরেই শেফালি বাড়ি ছেড়েছে,শুধু জানতে পাইনি কিংবা জানতে পেরেও আমি পরেরদিন আমার নির্ধারিত সময়ে জানালায় হাত দেয়ার পরক্ষণেই এলাকার দোকানদার মন্ডল জানালো -'শেপালি তো গেছেগা, আন্ধার কাটোনের আগ দিয়াই গেছেগা'। আমি আগে থেকে জানতাম এমন ভাব করে বললাম-'হ, কইতাছিল যাইবগা, অর বাপে নিহি আইছিল, বুইড়া কইছে ওরে যেন না বিছড়াই'। মন্ডল আমার কথা বিশ্বাস করলো কী করলো না তার অপেক্ষায় না থেকে আমি পা বা...

ট্রলার

পান চিবাইতে চিবাইতে আব্দুর রহমান বাড়ি ফিরে। দুপুরে খাবারের পর সে নিয়ম করে ঘর থেকে বাইর হয়, তা যতই বৃষ্টি হোক কিংবা ঠাডা পড়া রোদই হোক না কেন, রশিদের দোকান থেকে সে পান কিনে, হালকা জর্দা দেয়া, একটু চুন সাথে সুপারি দেয়া অর্ধেক পান খাবে সে এবং শেষ পিকটা ফেলবে সে তার বাড়ির দরজার পাশের দেয়ালে আর এভাবেই ঐ দেয়ালটার নিচের সম্পূর্ণ অংশ সবসময় লাল হয়ে থাকে। আব্দুর রহমান চল্লিশোর্ধ্ব, কোন কারনে সে এলাকায় গরুর ব্যাপারী হিসেবে পরিচিত, তাকে সবাই আব্দুর রহমান বেপারী ডাকে, তবে লোকে তাকে কেন গরুর ব্যাপারী ভাবে সে আজো ঠাওর করতে পারেনা, কোনদিন ঘোর লাগা এক বর্ষার রাতে সে কলিমুদ্দি ব্যাপারীর সাথে তাস খেলতে খেলতে হয়তো গরুর বেপার নিয়ে দুই একটা কথা বলছিল তাতেই কি লোক তাকে ব্যাপারী নাম দিল নাকি তা নিয়ে সে প্রায়ই ভাবে এবং ভাবতে ভাবতে কোন কুল কিনারা না করতে পেরে মাছের ট্রলার আজো কেন ফিরল না সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়। আব্দুর রহমানের আসল কাজ মিয়া বাড়ির আটটা ট্রলার দেখা শোনা করা, এবং এই এলাকায় যে আর কারো দুই একটার বেশি ট্রলার সে বাড়তে দেয়না এইটা জানার কারণে মিয়া বাড়ির বড় মিয়া তাকে বেশ স্নেহ করে আর এই স্নেহ মাঝে মধ্যে বাড়...