সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পেশা

“ সিগারেট মুখে দিয়া হাঁটলে নিজেরে রাজা রাজা লাগে ”- শহিদ মিয়ার ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে প্রথমেই তাকে প্রশ্ন করেছিলাম আপনি পাবলিক প্লেসে সিগারেট খান কেন? এর উত্তরে সে ওই কথাটি বলল। পাবলিক প্লেস কী জিনিস তা শহিদ মিয়ার বুঝার কথা না। তবে ব্যাপারটি সে অনুধাবন করল এবং তার অনুধাবন শক্তিতে আমি যারপরনাই খুশি। আমি একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক। ফিচার রেডি করার জন্য পথে ঘাটে ছুটতে হয়। কথা বলতে হয় পথে আমার দৃষ্টিতে ‘আজব’ লাগে এমন লোকজনের সাথে।

একবার মোটর সাইকেল দিয়ে যাচ্ছি দেখি রাস্তার ধারের বড় ড্রেইনটিতে এক লোক ‘ছোট’ প্রকৃতির ডাক সাড়ছে। মোটর সাইকেল থামিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই কাহিনী কী, রাস্তার পাশে যত্রতত্র মূত্র ত্যাগ করছেন কেন? সে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল-“আইর্যেন্ট তো, তাই”। আমি তার ইংরেজি উচ্চারণে মুগ্ধ হলাম। যাক প্রধানমন্ত্রী আর শিক্ষামন্ত্রীর স্বপ্ন বিফল হয়নি। দেশের মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম ভাই আপনার নাম কী? –“ জিল্লুর রহমান”। আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম বাহ আপনি তো তাইলে দেশের প্রেসিডেন্ট । তো রাস্তা ঘাটে মুতেন কেন? সে আমার কথায় বিরাট মাইন্ড করে ফেলল। বলল “ওই মিয়া আপ্নে কেডা?” আমার পরিচয় দিতেই সে আরো খেপে গেল। বুঝলাম দেশের মানুষ সাংবাদিকদের উপর বিল্লা হয়া আছে। -“মিয়া আপ্নারা পত্রিকায় ওলট-পালট কতা লিকেন আর আমরা পরি ফ্যাচের মইদ্যে,ইত্রামির আর যায়গা পায় না”। বলেই সে হনহন করে হাঁটা ধরল। আমিও তার পিছে পিছে হাঁটা ধরলাম। তার প্যাচ ধরার জন্য আমার বিরাট উৎসাহ। সে ঘুরে আমার দিকে মারমুখী হয়ে এল। আমি বুঝলাম ঘটনা বেশী সুবিধার না। তাড়াতাড়ি ফিরে এসে মোটর সাইকেল নিয়ে গন্তব্যে চলে গেলাম।

এবার আসি শহিদ মিয়ার কাছে। শহিদ মিয়ার সাথে কথা বলে যতদূর জানতে পারলাম যে তার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে, সে একটা খারাপ কাজ করে আর তা হল ফার্মগেটসহ আরও কয়েকটা এলাকায় সে পতিতাদের দালাল হিসেবে কাজ করে । অবশ্য কাজের সময় রাত ১০টার পর। আমাকে অবশ্য সে কথাটি সহজে বলে নাই। যখন তাকে বললাম যে আপনার কথা বললে পত্রিকায় আপনাকে নিয়ে একটা নিউজ করব, আপনার ছবি আসবে তখন সে সহজেই রাজি হয়ে গেল। সে লাফ দিয়ে বলে উঠল-“আরে আমি তো এইডাই চাইতাছিলাম,এইডা হইলে তো আমার কাস্টমার বাইড়া যাইব”। আমি তার আসন্ন ব্যবসায়িক সাফল্যের সাথে নিজের অংশগ্রহনে গর্ব বোধ করতে লাগলাম। অবশ্য বেশী গর্বে না গর্ভবতী হয়ে পড়ি তারও একটা আশঙ্কা কাজ করতে লাগল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই যে এতো ‘কঠিন’ কাজ করেন তো পুলিশের ভয় থাকে না? সে এর ফলে সবার জানা অথচ চমকপ্রদ একটি উত্তর দিল-“হেগো তো সিস্টেম মারা থাহেই,মাজে মইদ্যে ক্যাচাল করলে ফিটিং মারা লাগে আবারো। আর আমার উপ্রে তো কত্ত বস হের ইয়ত্তা নাইগা।আমি কী কী আর একলা এইসব কাম করি লগে আরো পোলাপাইন থাহে না! মাজে মইদ্যে নতুন মাইয়াডিও ক্যাচাল করে তয় ঠিক হয়া যায় , হাজার হউক মানুষ তো। কাম কইরা তো খাইতে হইব”। এই বলে সে লম্বা একটা সুখ টান দেয় সিগারেটে। জিজ্ঞেস করলাম ভাই কবে আসছেন ঢাকায়? –“আইছি ধরেন নিজের নাম কইতে পারি খালি হেইকালে,বাপের নামও মনে নাই,মায়ের চেহারাও মনে নাই। হে আরেক হিস্টরি,আইজকা সব কইলে আর তো আইবেন না। আরেকদিন আইয়েন, মোবাইল নাম্বারডা সেব করেন।” আমি শহিদ মিয়ার মোবাইল নাম্বারটা সেইভ করতে করতে ভাবি বলা তো যায় না কখন কী কাজে লাগে। পেশা আর জৈবিক প্রয়োজনে তো এদেরই দরকার হয়।


সায়েম,০২/০২/১১
সিলেট

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিমাইকে ঘিরে কিছু প্রশ্ন

সময়টা তখনও দুপুর হয়নি,কৃষক নিমাইকে উষ্কখুষ্ক অবস্থায় মাঠে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কেউ হয়তো তাকে খেয়াল করছে, কেউ হয়তো করছে না। নিমাইয়ের পাশের ক্ষেতে চাষীরা কাজ করছে। এমন কর্মব্যস্ত দিনে নিমাইকে গালে হাত দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকতে দেখে কারো মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে, কারো হয়তো জাগছে না। পাশের ক্ষেতগুলোতে   কাজ করছে ভূমিহীন বর্গাচাষী ইদ্রিছ মিয়া,দীর্ঘদেহী সোলায়মান আর প্রাণেশ। তারা কেউ কেউ নিমাইয়ের কুশল জিজ্ঞাসা করে, কেউ করেনা।  নিমাই একজন বর্গাচাষী এবং অবশ্যই অস্বচ্ছল। অভাব অনটন যে তার এবং তার জাতের নিত্যসঙ্গী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্গাচাষীদের নিজের জমি থাকে না,অন্যের জমিতে তারা চাষ করে বিনিময়ে অর্ধেক অথবা তিন ভাগের এক ভাগ ফসল পায় এবং তা দিয়ে তাদের সারা বছরের অভাব কোনক্রমেই ঘুচে না। তাদের বছর বছর বংশ বৃদ্ধি পায়, প্রবীন একজনের হয়তো মৃত্যু হয়,যুবক আর কিশোরীদের বিয়ে হয়,যুবতী বোন হয়তো স্বামী পরিত্যাক্তা হয় কিন্তু তিন অক্ষরের অভাবটাই ঘুচে না।   নিমাইয়ের ঘরে স্বাভাবিকভাবেই হোক অথবা বাধ্য হয়েই হোক এক বউ। মুসলমান হলেও সে দুই অথবা তিন বউ রাখতে পারত না। এর জন্য আর্থিক সঙ্গতি...

দক্ষিণ মৈশুন্দি কিংবা ভূতের গলিতে মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে (2)

                          পর্ব ২- শেপালি মোহাম্মদ শহীদুল হক সাবের সাথে আমার কিংবা আমাদের পরিচয়ের প্রথম পর্বে শেফালির বিয়ে হয়ে যায়। আবার আমাদের সিদ্ধান্তেও আশা যাবেনা যে শেফালির বিয়ে হয়েছে , ওর তো বিয়ে হবার কথা ছিল, বিয়ে হয়েছিল কিনা সেটা আমরা এই গল্পের শেষে জানতে পারব , হয়তোবা পারবনা। আমরা কেউ শেফালির গ্রামের বাড়ির ঠিকানা না জানাতে ওর বিয়েতে উপস্থিত হতে পারিনি ব্যাপারটা আসলে এমন নয়, শেফালি কিংবা শেফালির বাবা আমাদের কাউকেই বলে যায়নি অথবা বিয়ের দাওয়াত আমরা পাইনি।  ভেজা হাত ধরতে ধরতে হঠাৎ একদিন আর জানালা খুলতে না পেরে আমি বুঝতে পারলাম হয়তো খুব ভোরেই শেফালি বাড়ি ছেড়েছে,শুধু জানতে পাইনি কিংবা জানতে পেরেও আমি পরেরদিন আমার নির্ধারিত সময়ে জানালায় হাত দেয়ার পরক্ষণেই এলাকার দোকানদার মন্ডল জানালো -'শেপালি তো গেছেগা, আন্ধার কাটোনের আগ দিয়াই গেছেগা'। আমি আগে থেকে জানতাম এমন ভাব করে বললাম-'হ, কইতাছিল যাইবগা, অর বাপে নিহি আইছিল, বুইড়া কইছে ওরে যেন না বিছড়াই'। মন্ডল আমার কথা বিশ্বাস করলো কী করলো না তার অপেক্ষায় না থেকে আমি পা বা...

ট্রলার

পান চিবাইতে চিবাইতে আব্দুর রহমান বাড়ি ফিরে। দুপুরে খাবারের পর সে নিয়ম করে ঘর থেকে বাইর হয়, তা যতই বৃষ্টি হোক কিংবা ঠাডা পড়া রোদই হোক না কেন, রশিদের দোকান থেকে সে পান কিনে, হালকা জর্দা দেয়া, একটু চুন সাথে সুপারি দেয়া অর্ধেক পান খাবে সে এবং শেষ পিকটা ফেলবে সে তার বাড়ির দরজার পাশের দেয়ালে আর এভাবেই ঐ দেয়ালটার নিচের সম্পূর্ণ অংশ সবসময় লাল হয়ে থাকে। আব্দুর রহমান চল্লিশোর্ধ্ব, কোন কারনে সে এলাকায় গরুর ব্যাপারী হিসেবে পরিচিত, তাকে সবাই আব্দুর রহমান বেপারী ডাকে, তবে লোকে তাকে কেন গরুর ব্যাপারী ভাবে সে আজো ঠাওর করতে পারেনা, কোনদিন ঘোর লাগা এক বর্ষার রাতে সে কলিমুদ্দি ব্যাপারীর সাথে তাস খেলতে খেলতে হয়তো গরুর বেপার নিয়ে দুই একটা কথা বলছিল তাতেই কি লোক তাকে ব্যাপারী নাম দিল নাকি তা নিয়ে সে প্রায়ই ভাবে এবং ভাবতে ভাবতে কোন কুল কিনারা না করতে পেরে মাছের ট্রলার আজো কেন ফিরল না সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়। আব্দুর রহমানের আসল কাজ মিয়া বাড়ির আটটা ট্রলার দেখা শোনা করা, এবং এই এলাকায় যে আর কারো দুই একটার বেশি ট্রলার সে বাড়তে দেয়না এইটা জানার কারণে মিয়া বাড়ির বড় মিয়া তাকে বেশ স্নেহ করে আর এই স্নেহ মাঝে মধ্যে বাড়...